পুরান চাল পুরান তারকা—দুটোই ‘ভাতে বাড়ে’। বলিউডের মতো হলিউডের এই কথা
সত্যি। যদি আপনি তারকাদের আয়ের দিকে তাকান। বলিউডের রাজত্ব এখনো তিন ‘খান
সাহেব’-এর দখলে। তিনজনই পঞ্চাশের দোরগোড়ায়। আরও নির্দিষ্ট করে বললে, তিনজনই
৪৮ বছর বয়সে পর্দা কাঁপিয়ে চলেছেন।
হলিউডেও ছবিটা ব্যতিক্রম নয়। বিশেষ
করে সেখানকার ছবি বলিউডের মতো রোমান্সনির্ভর নয় বলে ‘বুড়ো’ তারকাদের কদর
এমনিতেই বেশি। ২০১৩ সালে হলিউড তারকাদের আয় বিশ্লেষণ করে দেখেছে নিউইয়র্ক
ফিল্ম একাডেমি। তাদের সেই বিশ্লেষণ প্রকাশ করেছে উইমেন্স মিডিয়া সেন্টার
নামের একটি সংস্থা। তাতেই দেখা যাচ্ছে, হলিউডে সবচেয়ে বেশি আয় করা ১০ পুরুষ
তারকার সবাই ৪০ পেরিয়ে গেছেন।
১০-এ থাকাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বয়স লিয়াম নিসনের, ৬১ বছর। সবচেয়ে কম
ডোয়াইন জনসনের—৪১। প্রতিবেদনটি যেহেতু উইমেন্স মিডিয়া সেন্টার প্রকাশ
করেছে, তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল, হলিউডের রাজত্বে নারী অভিনেত্রীদের অবস্থান
বিশ্লেষণ করা। আর সেই বিশ্লেষণ করতে গিয়েই দেখা গেছে, যতই নারী-পুরুষ
সমতার কথা বলা হোক, পুরুষ তারকাদের তুলনায় নারী তারকারা হলিউডে এক রকম
অবহেলিতই। পুরুষদের তুলনায় অর্ধেক কিংবা তারও কম আয় করেন তাঁরা। হলিউড এখনো
পুরুষশাসিত এক রাজ্যই।
শুধু তা-ই নয়, পর্দায় তাঁদের উপস্থিতি বেশির ভাগ
ক্ষেত্রেই অলংকারের মতো। কেবল সৌন্দর্য বাড়াতেই ব্যবহার করা হয়। ২০১৩ সালে
পুরুষের তুলনায় ছবিতে নারীর বক্তব্যধর্মী চরিত্র ব্যবহার করা হয়েছে মাত্র
২৯ শতাংশ। শুধু তা-ই নয়, পর্দায় নারীদের ‘আকর্ষকভাবে’ ইচ্ছাকৃত উপস্থাপনের
প্রবণতাও বেড়েছে। বেড়েছে ‘ঘনিষ্ঠ দৃশ্য’ উপস্থাপনের হারও। ২০০৭ সালের
তুলনায় যেটি তিন গুণ বেড়েছে বলে উঠে এসেছে ওই প্রতিবেদনে।
বয়সের দিক
দিয়েও পুরুষ এবং নারী অভিনেত্রীদের চিত্রটা একেবারেই উল্টো। হলিউডে যেমন
বেশি বয়সে অভিনেতার কদর, অভিনেত্রীর বেলায় কিন্তু প্রযোজকেরা বেছে নেন কম
বয়সীদেরই। সবচেয়ে বেশি আয় করা দশ অভিনেত্রীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বয়স
সান্ড্রা বুলকের—৪৯ বছর। তালিকায় ৪০ পেরোনো অভিনেত্রী আছেন আর মাত্র
দুজন—জুলিয়া রবার্টস (৪৬) ও জেনিফার অ্যানিস্টোন (৪৫)। জেনিফার লরেন্স,
ক্রিস্টেন স্টুয়ার্ট, এমা স্টোন—তিনজনেরই বয়স ২৩ থেকে ২৫-এর ঘরে।
প্রতিবেদনটির
মূল উদ্দেশ্য অবশ্য ছিল তারকাদের আয় নিয়েই। সেখানেই দেখানো হয়েছে, গত বছর
সবচেয়ে বেশি আয় করেছেন রবার্ট ডাউনি জুনিয়র। আয়রনম্যানের আয় ছিল সাড়ে সাত
কোটি মার্কিন ডলার (৫৮২ কোটি ৮২ লাখ টাকা)। মানে কিনা দিনেই দেড় কোটি টাকা
আয় করেন ডাউনি জুনিয়র!
অভিনেত্রীদের মধ্যে সর্বোচ্চ আয় করেন
অ্যাঞ্জেলিনা জোলি। ২০১৩ সালে তাঁর আয় ছিল তিন কোটি ৩০ লাখ ডলার (২৫৬ কোটি
৪৪ লাখ টাকা)। মানে কিনা ডাউনির চেয়ে তিনি অর্ধেকেরও কম আয় করেন।
নারী-পুরুষ মিলিয়ে হলিউডের সবচেয়ে বেশি আয় করা ১০ তারকার তালিকা করা হলে
সেরা ১০-এ জায়গা পাবেন কেবল জোলিই। সেখানেও তাঁর অবস্থান হবে ৯-এ। হলিউডে
সবচেয়ে বেশি আয় করা সেরা ১০ অভিনেতার মধ্যে জোলির চেয়ে কম আয় করেন কেবল
নিসন, তিন কোটি ১৫ লাখ ডলার (২৪৪ কোটি ৭৮ লাখ টাকা)।
এ তো গেল ক্যামেরার
সামনের অবস্থা। ক্যামেরার পেছনে যাঁরা কাজ করেন, সেখানে নারীদের অবস্থান
কেমন? সেখানে অবস্থাটা আরও করুণ। গত বছর সবচেয়ে আয় করে ২৫০টি ছবির মধ্যে
পরিচালক কিংবা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করা নারীর হার ছিল মাত্র ১৬
শতাংশ।
সূত্র: নিউইয়র্ক ফিল্ম একাডেমি
No comments:
Post a Comment